মক্কী জীবন তথা ইসলাম প্রচার লগ্ন:
প্রত্যাদেশ অবতরণের পর নবী (সা:) বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে, কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদ (সা:)- এর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি ছিলেন হযরত খাদিজা রাঃ এরপর মুসলমান হন মোহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ ইসলাম গ্রহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী (সা:) নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন, এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ মেনে নেয়নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো হযরত আলী রাঃ। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর (সা:)- এর অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ করতে থাকেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত:
তিন বছর গোপনে দ্বীনে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ (সা:) প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। নবী (সা:) সাফা পর্বতের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায় এবং এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।
মক্কায় নবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ:
মক্কার কাফির-মুশরিকরা যখন নবী করীম (সা:)- কে আদর্শিক দিক দিয়ে মুকাবিলা করতে পারছিল না, তখন তারা ভিন্ন পথ খুঁজতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে ইসলামের উত্তাল তরঙ্গ কিভাবে স্তব্ধ করা যায়। সে লক্ষ্যে তারা বেছে নেয় গাল-মন্দের পথ ও কুৎসা রটনাসহ বিভিন্ন অশালীন কথার দ্বারা তাঁর নির্মল চরিত্রে কালিমা লেপনের ঘৃণ্য পথ। তাদের বিশ্বাস এ অস্ত্রের আঘাতেই তাঁকে ধরাশায়ী করা সম্ভব। ভিনদেশী লোকেরা দ্বীন গ্রহণ করতে এসে তাঁর বদনাম শুনে ইসলাম গ্রহণ না করে নিজ দেশে ফিরে যাবে। আর যদি তারা যাচাই-বাছাই করতে আসে তাহলে ঘুরে ফিরে তাদের কাছেই তো আসতে হবে। তখন তারা তাদের মগজ ধোলাই করেই ছাড়বে। কাফির-মুশরিক কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা:) কে দেয়া গালি ও মিথ্যা অপবাদসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো।
পাগল এবং কবি:
তারা রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে পাগল বা কবি হিসাবে প্রচার করতে থাকে। যেন মানুষ তার কাছে না যায় এবং তাঁর নিকট অবতারিত ওহী তথা কুরআনুল কারীম থেকে দূরে থাকে। কেননা পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। আর যদি পবিত্র কুরআন কবির কবিতা হয় তাহলে অহির ভিন্ন কোন মর্যাদাও থাকে না। তাই তারা এ নোংরা পথ বেছে নেয়।
যাদুকর ও মিথ্যাবাদী:
নবী করীম (সা:)- কে তারা জাদুকর ও মিথ্যাবাদী হিসাবে প্রচার করে। কেউ যেন তাঁর কথা না শুনে। পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে সকলেই মুগ্ধ হয়ে যেত। আর এটাকেই তারা জাদুকরী প্রভাব বলে সমাজে প্রচার করতে থাকে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারলে তাঁর প্রচারিত দ্বীন 'ইসলাম' কেউ গ্রহণ করবে না। এই ভেবে তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী অপবাদ আরোপ করে।
পূর্বকালের উপাখ্যান বর্ণনাকারী:
তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীমকে তারা পূর্ববর্তী লোকদের কল্পকথা বলে প্রচার চালিয়ে ছিল। তারা বলে, এসব আগেকার মানুষের অলিক কাহিনী। পবিত্র কুরআনের 'আহসানুল কাছাছ' তথা সর্বোত্তম শিক্ষণীয় ঘটনাগুলোকে তারা অতীতের রূপকথার কাহিনী বলে চালিয়ে দিয়েছিল। যেন পবিত্র কুরআন থেকে মানুষ অনেক দূরে অবস্থান করে। কেউ যেন এর ধারে কাছেও যেতে না পারে। যেমন আল্লাহ বলেন, '"তাদেরকে যখন আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনানো হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনেছি, ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, নিঃসন্দেহে এটা পূর্ববর্তীদের মিথ্যা রচনা (উপকথা) ছাড়া আর কিছু নয়"' (আনফাল ৮/৩১)। আল্লাহ আরো বলেন, '"তারা বলে, এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়"' (ফুরক্বান ২৫/৫)।
অন্যের সাহায্যে মিথ্যা রচনাকারী:
তারা নবী করীম (সা:)- কে অন্যের সহযোগিতায় মিথ্যারোপকারী বলে প্রচার করতে থাকে। তারা দাবী করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:)- এর প্রচারিত ধর্ম মিথ্যা। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের সাহায্যে এ মিথ্যা বাণী প্রস্তুত করেছেন।
মিথ্যা রটনাকারী:
রাসূল (সা:)- কে মিথ্যা রটনাকারী বলে অভিহিত করেছিল। ক্ষেত্র বিশেষে মহান আল্লাহ কখনও কোনো বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন কোনো বিধান নাযিল করলে তারা বলত, তিনি মিথ্যা উদ্ভাবনকারী না হলে এরূপ পরিবর্তন কেন হচ্ছে। যেমন আল্লাহ বলেন, "আমি যখন কোন এক আয়াত পরিবর্তন করে তার স্থলে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে, তুমি তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না' (সুরা-নাহাল ১৬/১০১)।
ভবিষ্যদ্বক্তা:
তারা নবী করীম (সা:)- কে গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তা হিসাবে চিত্রিত করতে থাকে। আর এসবের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন তাঁর প্রচারিত দ্বীন তথা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। অনেক সময় তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো আল্লাহ তা'য়ালা জিবরাঈল আ.- এর মারফতে রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে জানিয়ে দিতেন। তখন তারা বলতো এ তো দেখছি ভবিষ্যদ্বক্তা বা জ্যোতিষী! অথচ নবী (সা:) যে গণক বা জ্যোতিষী নয় এমর্মে মহান আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেন, '"অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাকো, তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি গণক নও, উন্মাদও নও"' (সুরা-তূর ৫২/২৯)।'
ফেরেশতা নয়, এতো সাধারণ মানুষ:
তারা নবী (সা:)- কে সাধারণ মানুষ বলে তাঁর নবুওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। কেননা তিনি নবী হলে তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা নেই কেন, যে তাঁর সত্যায়নকারী হত? তারা মনে করত নবী কোন সাধারণ মানুষ হতে পারে না। তিনি ফেরেশতাদের মধ্যে কেউ একজন হবে।
পথভ্রষ্ট:
তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও উল্টো তারাই নবী করীম (সা:)- কে পথভ্রষ্ট বলে গালি-গালাজ করতো। তাদের দৃষ্টিতে তারাই হক্ব পন্থী এবং নবী করীম (সা:) ও মুমিনরাই বিপথগামী।
বেদ্বীন:
রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে বেদ্বীন বা ধর্মত্যাগী বলে তাদের প্রচারণা চালাত। ফলে তারা স্বীয় ধর্মীয় লোকদের ক্ষিপ্ত করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কারণ হিসাবে তারা বলত মুহাম্মাদ (সা:) পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম তথা ইসলাম গ্রহণ করে বেদ্বীন হয়ে গেছে। যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) মক্কায় হাজীদের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন আবু লাহাব তাঁর পিছনে বলছিল, 'তোমরা তাঁর কথা শুনবে না, সে হচ্ছে মিথ্যাবাদী বেদ্বীন' (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৮৬)। জাহেলী যুগের মানুষদের প্রচারণায় অবাক না হয়ে পারা যায় না। যিনি বেদ্বীন মানুষকে সঠিক দ্বীন তথা ইসলামে ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য নিরলসভাবে দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁকেই শুনতে হয়েছে ধর্মত্যাগী নামক নোংরা গালি। এই সব আজগুবি কথা সমাজে কিছু নাস্তিক্যবাদীদের কণ্ঠে বা শ্লোগানে শোনা যায়, তারা কখনো সফল হবে না।
পিতৃধর্ম বিনষ্টকারী এবং জামা'আত বিভক্তকারী:
তারা পূর্ব পুরুষদের ধর্ম বিনষ্টকারী ও ঐক্য বিনষ্টকারী হিসাবে সমাজের মাঝে প্রচারণা চালায়। জাহেলী যুগে কুরাইশ নেতারা রাসূলুল্লাহ (সা:)- এর চাচা আবু তালিবের নিকট গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ করে। এ সব অভিযোগ করে ইসলামের দাওয়াতি মিশন নিস্তব্ধ করতে চেয়েছিল। প্রকারান্তরে তারা নবী করীম (সা:)- কে নিয়ে হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা চাচার কাছে অভিযোগ করে যে, আপনার পিতা-পিতামহের বিরোধিতা করছে, আপনার জাতির ঐক্য ছিন্নভিন্ন করছে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তাকে নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করছে। (তাকে আমাদের হাতে তুলে দিন) আমরা তাকে হত্যা করবো। (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৯৪)।
যাদুগ্রস্ত:
তারা নবী করীম (সা:)- কে যাদুগ্রস্ত হিসাবে সমাজে প্রচার করতে থাকে। যেন তার কথায় কেউ কর্ণপাত না করে। কেননা যাদুগ্রস্ত মানুষের কথায় কেউ কর্ণপাত করে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, "'যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শুনে তখন তারা কেন কান পেতে তা শুনে তা আমি ভাল করে জানি এবং (এটাও জানি) গোপনে আলোচনাকালে যালিমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছো মাত্র"' (সুরা-বনী ইসরাঈল ১৭/৪৭)।
শুধু এই নয় তারা নবীর বিভিন্ন নাম বিকৃত করে বা অস্পষ্ট নাম ব্যবহার করে মনের ঝাল মিটাতে থাকে। কোনো ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়ার জন্যই সাধারণত যেভাবে তার নাম বিকৃত করা হয়। এক্ষেত্রে তারাও রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে বিকৃত নাম ধরে ডেকে কষ্ট দিত। আর এভাবেই বিভিন্ন দিকে বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নবীজি (সা:)- এর উপর নির্যাতনী কর্মকাণ্ড শুরু করে: প্রথমত উস্কানি ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কূটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদ (সা:)- এর সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ (সা:) তা মেনে নেননি, কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মত ইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্রে তাঁর ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ:
এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। নবী (সা:) সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোনো একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছা এতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবিচেত হচ্ছিল। এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন:
কিন্তু মুক্তির পরের বছরটি ছিল মুহাম্মাদ (সা:) জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে নবী মক্কায় ইসলাম প্রসারের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (অবশ্য তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনে লেলিয়ে দেয়, তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি, নব সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।
মি'রাজ তথা উর্দ্ধারোহন:
এমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মাদ (সা:) এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান, এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশত ও দোযখসহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি'রাজ নামে পরিচিত।
http://itibritto.com/
Wikipedia
প্রত্যাদেশ অবতরণের পর নবী (সা:) বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে, কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদ (সা:)- এর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি ছিলেন হযরত খাদিজা রাঃ এরপর মুসলমান হন মোহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ ইসলাম গ্রহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী (সা:) নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন, এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ মেনে নেয়নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো হযরত আলী রাঃ। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর (সা:)- এর অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ করতে থাকেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত:
তিন বছর গোপনে দ্বীনে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ (সা:) প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। নবী (সা:) সাফা পর্বতের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায় এবং এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।
মক্কায় নবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ:
মক্কার কাফির-মুশরিকরা যখন নবী করীম (সা:)- কে আদর্শিক দিক দিয়ে মুকাবিলা করতে পারছিল না, তখন তারা ভিন্ন পথ খুঁজতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে ইসলামের উত্তাল তরঙ্গ কিভাবে স্তব্ধ করা যায়। সে লক্ষ্যে তারা বেছে নেয় গাল-মন্দের পথ ও কুৎসা রটনাসহ বিভিন্ন অশালীন কথার দ্বারা তাঁর নির্মল চরিত্রে কালিমা লেপনের ঘৃণ্য পথ। তাদের বিশ্বাস এ অস্ত্রের আঘাতেই তাঁকে ধরাশায়ী করা সম্ভব। ভিনদেশী লোকেরা দ্বীন গ্রহণ করতে এসে তাঁর বদনাম শুনে ইসলাম গ্রহণ না করে নিজ দেশে ফিরে যাবে। আর যদি তারা যাচাই-বাছাই করতে আসে তাহলে ঘুরে ফিরে তাদের কাছেই তো আসতে হবে। তখন তারা তাদের মগজ ধোলাই করেই ছাড়বে। কাফির-মুশরিক কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা:) কে দেয়া গালি ও মিথ্যা অপবাদসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো।
পাগল এবং কবি:
তারা রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে পাগল বা কবি হিসাবে প্রচার করতে থাকে। যেন মানুষ তার কাছে না যায় এবং তাঁর নিকট অবতারিত ওহী তথা কুরআনুল কারীম থেকে দূরে থাকে। কেননা পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। আর যদি পবিত্র কুরআন কবির কবিতা হয় তাহলে অহির ভিন্ন কোন মর্যাদাও থাকে না। তাই তারা এ নোংরা পথ বেছে নেয়।
যাদুকর ও মিথ্যাবাদী:
নবী করীম (সা:)- কে তারা জাদুকর ও মিথ্যাবাদী হিসাবে প্রচার করে। কেউ যেন তাঁর কথা না শুনে। পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে সকলেই মুগ্ধ হয়ে যেত। আর এটাকেই তারা জাদুকরী প্রভাব বলে সমাজে প্রচার করতে থাকে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারলে তাঁর প্রচারিত দ্বীন 'ইসলাম' কেউ গ্রহণ করবে না। এই ভেবে তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী অপবাদ আরোপ করে।
পূর্বকালের উপাখ্যান বর্ণনাকারী:
তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীমকে তারা পূর্ববর্তী লোকদের কল্পকথা বলে প্রচার চালিয়ে ছিল। তারা বলে, এসব আগেকার মানুষের অলিক কাহিনী। পবিত্র কুরআনের 'আহসানুল কাছাছ' তথা সর্বোত্তম শিক্ষণীয় ঘটনাগুলোকে তারা অতীতের রূপকথার কাহিনী বলে চালিয়ে দিয়েছিল। যেন পবিত্র কুরআন থেকে মানুষ অনেক দূরে অবস্থান করে। কেউ যেন এর ধারে কাছেও যেতে না পারে। যেমন আল্লাহ বলেন, '"তাদেরকে যখন আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনানো হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনেছি, ইচ্ছা করলে আমরাও এর অনুরূপ বলতে পারি, নিঃসন্দেহে এটা পূর্ববর্তীদের মিথ্যা রচনা (উপকথা) ছাড়া আর কিছু নয়"' (আনফাল ৮/৩১)। আল্লাহ আরো বলেন, '"তারা বলে, এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়"' (ফুরক্বান ২৫/৫)।
অন্যের সাহায্যে মিথ্যা রচনাকারী:
তারা নবী করীম (সা:)- কে অন্যের সহযোগিতায় মিথ্যারোপকারী বলে প্রচার করতে থাকে। তারা দাবী করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:)- এর প্রচারিত ধর্ম মিথ্যা। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের সাহায্যে এ মিথ্যা বাণী প্রস্তুত করেছেন।
মিথ্যা রটনাকারী:
রাসূল (সা:)- কে মিথ্যা রটনাকারী বলে অভিহিত করেছিল। ক্ষেত্র বিশেষে মহান আল্লাহ কখনও কোনো বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন কোনো বিধান নাযিল করলে তারা বলত, তিনি মিথ্যা উদ্ভাবনকারী না হলে এরূপ পরিবর্তন কেন হচ্ছে। যেমন আল্লাহ বলেন, "আমি যখন কোন এক আয়াত পরিবর্তন করে তার স্থলে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে, তুমি তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবনকারী; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না' (সুরা-নাহাল ১৬/১০১)।
ভবিষ্যদ্বক্তা:
তারা নবী করীম (সা:)- কে গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তা হিসাবে চিত্রিত করতে থাকে। আর এসবের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যেন তাঁর প্রচারিত দ্বীন তথা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। অনেক সময় তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো আল্লাহ তা'য়ালা জিবরাঈল আ.- এর মারফতে রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে জানিয়ে দিতেন। তখন তারা বলতো এ তো দেখছি ভবিষ্যদ্বক্তা বা জ্যোতিষী! অথচ নবী (সা:) যে গণক বা জ্যোতিষী নয় এমর্মে মহান আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেন, '"অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাকো, তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি গণক নও, উন্মাদও নও"' (সুরা-তূর ৫২/২৯)।'
ফেরেশতা নয়, এতো সাধারণ মানুষ:
তারা নবী (সা:)- কে সাধারণ মানুষ বলে তাঁর নবুওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। কেননা তিনি নবী হলে তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা নেই কেন, যে তাঁর সত্যায়নকারী হত? তারা মনে করত নবী কোন সাধারণ মানুষ হতে পারে না। তিনি ফেরেশতাদের মধ্যে কেউ একজন হবে।
পথভ্রষ্ট:
তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও উল্টো তারাই নবী করীম (সা:)- কে পথভ্রষ্ট বলে গালি-গালাজ করতো। তাদের দৃষ্টিতে তারাই হক্ব পন্থী এবং নবী করীম (সা:) ও মুমিনরাই বিপথগামী।
বেদ্বীন:
রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে বেদ্বীন বা ধর্মত্যাগী বলে তাদের প্রচারণা চালাত। ফলে তারা স্বীয় ধর্মীয় লোকদের ক্ষিপ্ত করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কারণ হিসাবে তারা বলত মুহাম্মাদ (সা:) পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম তথা ইসলাম গ্রহণ করে বেদ্বীন হয়ে গেছে। যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) মক্কায় হাজীদের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখন আবু লাহাব তাঁর পিছনে বলছিল, 'তোমরা তাঁর কথা শুনবে না, সে হচ্ছে মিথ্যাবাদী বেদ্বীন' (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৮৬)। জাহেলী যুগের মানুষদের প্রচারণায় অবাক না হয়ে পারা যায় না। যিনি বেদ্বীন মানুষকে সঠিক দ্বীন তথা ইসলামে ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য নিরলসভাবে দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁকেই শুনতে হয়েছে ধর্মত্যাগী নামক নোংরা গালি। এই সব আজগুবি কথা সমাজে কিছু নাস্তিক্যবাদীদের কণ্ঠে বা শ্লোগানে শোনা যায়, তারা কখনো সফল হবে না।
পিতৃধর্ম বিনষ্টকারী এবং জামা'আত বিভক্তকারী:
তারা পূর্ব পুরুষদের ধর্ম বিনষ্টকারী ও ঐক্য বিনষ্টকারী হিসাবে সমাজের মাঝে প্রচারণা চালায়। জাহেলী যুগে কুরাইশ নেতারা রাসূলুল্লাহ (সা:)- এর চাচা আবু তালিবের নিকট গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ করে। এ সব অভিযোগ করে ইসলামের দাওয়াতি মিশন নিস্তব্ধ করতে চেয়েছিল। প্রকারান্তরে তারা নবী করীম (সা:)- কে নিয়ে হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা চাচার কাছে অভিযোগ করে যে, আপনার পিতা-পিতামহের বিরোধিতা করছে, আপনার জাতির ঐক্য ছিন্নভিন্ন করছে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তাকে নির্বুদ্ধিতা বলে অভিহিত করছে। (তাকে আমাদের হাতে তুলে দিন) আমরা তাকে হত্যা করবো। (আর-রাহীকুল মাখতূম, ১৭তম সংস্করণ ২০০৫ইং, পৃঃ ৯৪)।
যাদুগ্রস্ত:
তারা নবী করীম (সা:)- কে যাদুগ্রস্ত হিসাবে সমাজে প্রচার করতে থাকে। যেন তার কথায় কেউ কর্ণপাত না করে। কেননা যাদুগ্রস্ত মানুষের কথায় কেউ কর্ণপাত করে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, "'যখন তারা কান পেতে তোমার কথা শুনে তখন তারা কেন কান পেতে তা শুনে তা আমি ভাল করে জানি এবং (এটাও জানি) গোপনে আলোচনাকালে যালিমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছো মাত্র"' (সুরা-বনী ইসরাঈল ১৭/৪৭)।
শুধু এই নয় তারা নবীর বিভিন্ন নাম বিকৃত করে বা অস্পষ্ট নাম ব্যবহার করে মনের ঝাল মিটাতে থাকে। কোনো ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়ার জন্যই সাধারণত যেভাবে তার নাম বিকৃত করা হয়। এক্ষেত্রে তারাও রাসূলুল্লাহ (সা:)- কে বিকৃত নাম ধরে ডেকে কষ্ট দিত। আর এভাবেই বিভিন্ন দিকে বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নবীজি (সা:)- এর উপর নির্যাতনী কর্মকাণ্ড শুরু করে: প্রথমত উস্কানি ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কূটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদ (সা:)- এর সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ (সা:) তা মেনে নেননি, কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মত ইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্রে তাঁর ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ:
এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। নবী (সা:) সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোনো একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছা এতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবিচেত হচ্ছিল। এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন:
কিন্তু মুক্তির পরের বছরটি ছিল মুহাম্মাদ (সা:) জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে নবী মক্কায় ইসলাম প্রসারের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (অবশ্য তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনে লেলিয়ে দেয়, তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি, নব সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।
মি'রাজ তথা উর্দ্ধারোহন:
এমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মাদ (সা:) এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান, এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশত ও দোযখসহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি'রাজ নামে পরিচিত।
- নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনী -জন্ম, বংশ পরিচয় ও পরিবার, শৈশবকাল (P-I) সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনী -কৈশরকাল, পারিবারিক জীবন, নওবুয়ত (P-II) সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনী -মক্কী জীবন তথা ইসলাম প্রচার, ইসলামের দাওয়াত ও তায়েফ গমন (P-III) সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনী -মদিনায় হিজরত ও মাদানী জীবন, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও শাসননীতি, মক্কা বিজয় ও বিদায় হজ ও ঐতিহাসিক ভাষণ এবং নবীজি (সা:)- এর ওফাত (P-IV) সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনী - রাসূল (ছাঃ)- এর উপরে কাফিরদের নির্যাতন (P-V) সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
http://itibritto.com/
Wikipedia
No comments:
Post a Comment